তারিখঃ ২৫শে মার্চ ২০৭১ ।
সময়ঃ রাত ১২টা ১মিঃ ।
প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে ল্যাবরেটরির একটি বিশেষ কামরায় নিয়ে আসা হয়েছে। ল্যাবরেটরিটা সম্পুর্ণ BGD71 নামক আমাদের সৌরজগৎ এর বাইরের একটি গ্রহে তৈরী করা হয়েছে। এবং এই ল্যাব সম্পুর্ণ বাংলাদেশ সামরিক বাহীনির নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। প্রেসিডেন্ট নিক্সন এর আজ মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হবে। বাংলাদেশ সামরিক বাহীনির একজন উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা তার অপরাধ পাঠ করে শুনানোর জন্য এগিয়ে এল। এসেই পকেট থেকে একটি কাগজ বের করল। যাতে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এর অপরাধনামা লিখা রয়েছে। কর্মকর্তা বার বার প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এর দিকে তাকিয়ে দেখছে। পাশেই মনিটরে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এর শারিরীক অবস্তা পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে। পৃথিবী থেকে শুধুমাত্র দু'জন সাংবাদিককে আনা হয়েছে পর্যবেক্ষক হিসেবে। তারা এই দৃশ্য ভিডিও করে নিয়ে যাবে পৃথিবীর মানুষকে দেখানোর জন্য। সাংবাদিক দু'জন সচ্চ কাচের ভিতর দিয়ে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে পর্যবেক্ষন করছেন এবং তাদের ভিডিও ক্যামেরা শেষবারের মত ঠিকঠাক করে নিচ্ছেন।
সময়ঃ ১২টা ১০মিঃ।
বাংলাদেশ সামরিক বাহীনির কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এর অপরাধ পাঠ শুরু করলঃ
" বাংলাদেশের মানুষের অনেক বড় সৌভাগ্য যে তোমাকে শেষ পর্যন্ত বিচারের কাঠগরায় দাড় করাতে পেরেছিল। কোন বিশষ ট্রাইবুনাল করে নয়; বাংলাদেশের প্রচলিত বিচার ব্যাবস্তায় তোমার বিচার করা হয়েছে। তোমার অপরাধ সুস্পষ্টভাবে প্রমানীত হয়েছে এবং মাহামান্য আদালত তোমাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে।"
"এই মৃত্যুদন্ড কার্যকরের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মানুষ মানবতার বিরুদ্ধে একটি জগন্য অপরধের গ্লানি থেকে মুক্তি পাবে। এ দেশের জনগণ এই দিনটির জন্য এতদিন ধরে অপেক্ষা করে আসছিল।"
"তুমি মার্কিন যুক্ত্ররাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে মানুষ হত্যায় সহযোগীতা করেছিলে। সেই যুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ৩০ লাখ মানুষ মারা যায়। ২ লাখের বেশি মা বোন ধর্ষিত হয়। ২ কোটিরও বেশি মানুষ উদ্ভাস্তু হয়। "
"তুমি ও তোমার প্রসাশন ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানকে ৩৫ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সাহায্য ও নন লেথাল সামরিক সরঞ্জাম যেমন ট্রাক, ট্রান্সপোর্ট বিমান, অস্রের গুলি ইত্যাদি সরবরহ করে। এবং জর্ডাঙ্কে রাজি করানো হয় যেন পাকিস্তানকে F-104 Starfighter পাকিস্তানকে দেয়া হয়।"
"যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয় নিশ্চিত জেনে তুমি জাতিসংঘ কে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছ। তখনকার জাতিসংঘের মার্কিন দূত জর্জ বুশ ৫ ডিসেম্বর সিজফায়ার প্রস্তাব দেন যাতে স্পষ্টতই পাকিস্তানের পক্ষালম্বন করা হয়। কিন্তু তা সেভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোর কারণে ভেস্তে যায়। কোন উপায় না দেখে তুমি ও তোমার প্রসাশন সরাসরি ক্ষমতা প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয়। তোমার প্রসাশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৭ম নৌবহরের কয়েকটি জাহাজ নিয়ে টাস্কফোর্স ৭৪ গঠন করা হয় এবং এগুলো সিঙ্গাপুরে একত্রিত হয়ে বঙ্গোপসাগর অভিমূখে যাত্রা করে পাকিস্তানকে সাহায্য করার জন্য।"
"তুমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সবচেয়ে বড় পরোক্ষ বিরোধীতাকারী। তোমার মদদেই পাকিস্তান বাংলাদেশের এতগুলো মানুষকে হত্যা করতে পেরছে।"
"তারপরও বাংলাদেশ সরকার তোমার বিচার অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে সম্পন্য করেছে। তোমার সব অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানীত হয়েছে।তোমার পক্ষে বড় বড় আইনজীবি নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।"
যেহেতু তুমি ১৯৯৪ সালের ২২ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করছিলে তাই তোমাকে পৃথিবীর বাইরে BGD71 নামক গ্রহে ল্যাবরেটরীতে আলাদা করে তৈরী করা হয়েছে শাস্তি দেয়ার জন্য। তুমি প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এর ক্লোন।"
"এটা একটা নতুন পৃথিবী। এখানে অপরাধীরা মৃত্যুবরণ করেও পার পাবে না। শাস্তি তাকে পেতেই হবে।"
** গল্পটি মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের "একটি মৃত্যুদন্ড" ছোট গল্পের ছায়া অবলম্বনে।
*********************************************************************************
আমার কথাঃ গল্পটি কপিপেষ্ট বলা হবে কিনা জানি না। কারন আমি স্যারের এই গল্পটি পড়ে মনে হয়েছে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের এভাবেও তো বিচার করতে পারি। তাই এটা দিয়ে একটা শর্টফিল্ম বানানোর আশা ছিল। কিন্তু দেশের বাইরে চলে আসার কারণে আর হয় নি। যাই হোক শেষ পর্যন্ত সরকার বিচার শুরু করেছে আর এই পদ্ধতি দরকার নাই। তাই যাদের বিচার সরকার এখন করতে পারবে না তাদের জন্য এই পদ্ধতি ভবিষ্যতের জন্য রেখে দেয়া যাবে। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম এভাবে এদের বিচার করবে। আর আন্তর্জাতিক মানদন্ডের প্রশ্ন যারা তুলেন তাদের জন্য জাফর ইকবাল স্যার একটি মাজার কথা বলেছেনঃ-
" রাজাকাররা যখন ধরে ধরে জবাই করছিল, তখন তো কোনো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জবাই করেনি।"
***********************************************************************
4 মন্তব্য:
ভালো...।। চালিয়ে যাও...
অশোক...
ধন্যবাদ @অশোক...
ধন্যবাদ @অশোক...
ধন্যবাদ অশোক দা
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আপনার মন্তব্য পেলে খুশি হবো। সেটা যতই তিক্ত হোক না কেনো। আপনার সদয়/অসদয় মতামতের জন্য ধন্যবাদ জানবেন।