নির্লিপ্ত নটরডেম কলেজ থেকে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে গিয়েছিল লৌহজং। তাদের সাথে হলিক্রস কলেজের কিছু মেয়েও গিয়েছিল। এদের মাঝে একজন ছিল অন্তরা বিশ্বাস। সেই সূত্রেই প্রথম পরিচয়। প্রথম পরিচয়ে অন্তরা অবশ্য নিজের সারনেম ভুল দিয়েছিল। সেই নামেই অন্তরাকে চিনে নির্লিপ্ত।
নির্লিপ্ত ACCA Technical Level শেষ করার পর Saifur's School of Business এ ঐ লেভেলের একটা পেপারের ক্লাস নেয়া শুরু করে। Saifur's IELTS সেকশন ছিল পাশের বিল্ডিং এ। একদিন কোন এক রোদেলা সকালে সেদিন সূর্যি-মামা কোনদিকে পৃথিবীকে তার মুখদর্শন দিয়েছিলেন নির্লিপ্ত জানে না। কারণ নির্লিপ্তর জীবনে খুব কমই সকালের সূর্য দেখা হয়েছে। অন্তরা বিশ্বাস তার ক্লাসে বসা। নির্লিপ্ত তার ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে এই ক্লাসে আসার হেতু জিজ্ঞেস করলে অন্তরা বলে IELTS ক্লাস করতে এসেছে। নির্লিপ্ত রিসিপশনের একজনকে বলে ওকে পাশের বিল্ডিং এ IELTS ক্লাস দেখিয়ে দেয়ার জন্য বলে। নির্লিপ্ত কি কিছুটা আশাহত হয়েছিল সেদিন?
জ্যাজ মিউজিক নিয়ে ওর কোনদিন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু বন্ধু নিউটনের পাল্লায় পরে লন্ডনে একটা জ্যাজ মিউজিকের পার্টিতে যেতে হয়। পার্টির টিকেট ওর বন্ধুই সংগ্রহ করে। নির্লিপ্ত রাজি হয় কারণ ওর বন্ধুটি বলেছিল পার্টিতে মিনিমাম দশ বছরের পুরনো রেড ওয়াইন সার্ভ করা হবে। নির্লিপ্তর উদ্দেশ্য জ্যাজ মিউজিক না পুরনো ওয়াইন পান করা। ওর একটা স্বপ্ন আছে একজন ভাল ওয়াইন টেষ্টার হওয়া। স্বপ্নটা দেখিয়েছে ওরই ফ্যাকাল্টির টিচার মাইকেল মেনওয়ারি। পার্টিতে মৃদুমন্দ আলোতে হটাত নির্লিপ্ত খেয়াল করে খুব চেনা চেনা একটা ললনা কোন এক অচেনা পুরুষের বাহুতে, এক হাতে তারই মত ওয়াইন গ্লাস। নির্লিপ্তর চিরচেনা একজোড়া ঠোট সেই গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে। তখন নির্লিপ্তর খুব ইচ্ছে হচ্ছিল ওয়াইন গ্লাস হয়ে যেতে। ওকে দেখে অন্তরা কিছুটা অপ্রস্তুত। ছেড়ে দিল তার সঙ্গীর বাহুডোর। নির্লিপ্ত আড়ালে মুচকি হাসে। অন্তরা কি তার ভুল বুঝতে পারে। সে যে ভুল করে অন্য আরেকজনের বাহু ধরে ছিল এতক্ষণ।
নির্লিপ্তর বন্ধু সাজু নিয়ে যায় লন্ডনের বঙ্গবাজার খ্যাত প্রাইমার্কে টি-শার্ট চয়েস করার জন্য। দুইটা টি-শার্ট চয়েস করতে উনি এক ঘণ্টা কাটিয়ে দিয়েছেন। নির্লিপ্ত মনে মনে বিরক্ত। বিরক্তি কিছুটা ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেটের মাধ্যমে প্রকাশও করে দিয়েছে। সাজু বলছিল তোকে আমার বউ চয়েস করতে নিয়ে যাব না। নির্লিপ্ত বলে বউ যদি এভাবে কাপড় চয়েস করার মত গায়ে দিয়ে টেস্ট করে করা যেত তাহলে এক ঘণ্টা কি এক যুগেও কারো চয়েস হত না। নির্লিপ্তর বিরক্তি যখন চরম পর্যায়ে তখন তার বিরক্তি সম্পূর্ণ দূর করে দেয় স্টোরের অনেকগুলো আয়নার কোন একটাতে দেখে অন্তরা বিশ্বাস। কিন্তু কোথা থেকে এই প্রতিবিম্ব নির্লিপ্ত খুঁজে পায় না।
নির্লিপ্ত লন্ডনে কোন এক ফাস্ট ফুডের দোকানে কামলা খাটে। এক বিষণ্ণ দুপুরে একটা পিৎসা হোম ডেলিভারির অর্ডার আসে। ফোনে নাম বলল মিসেস রোজারিও। ওর শপের দুই গলি পরেই এড্রেস। ওর বস বলে হেটে হেটেই দিয়ে আস। গাড়ী নিয়ে গেলে এই টাইমে পার্কিং এর জায়গা পাবে না। এড্রেসে গিয়ে কলিং বেল চাপতেই অপর পাশে কেউ একজন দৌড়ে আসল দরজা খুলতে। এপাশ থেকে নির্লিপ্ত বুঝতে পারছে কোন ছোট্ট শিশু দরজা খোলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। টুল টানার শব্দ হল। অবশেষে সক্ষম হয়। ছোট্ট একটা পরীর মত মেয়ে। দরজা খুলে দিয়েই দৌড়ে ভিতরে। নির্লিপ্ত খোলা দরজায় নক করে বলে ''ম্যাম পিৎসা ডেলিভারি''; একটু পর দেখে অন্তরা সদ্য গোসল সেরে ভেজা চুলে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়ে। নির্লিপ্ত শুকনো গলায় বলে 'আমি মনে হয় ভুল দরজায় নক করে ফেলেছি। আমি মিসেস রোজারিওর কাছে এসেছি।' অন্তরা স্মিতহাসি দিয়ে বলে 'তুমি সারাজীবনই ভুল দরজায় নক করে গেলে। এবার ঠিক দরজায় নক করেছ। আমিই মিসেস অন্তরা রোজারিও। আর যে পিচ্ছিটা তোমাকে দরজা খুলে দিল সে জুনিয়র অন্তরা রোজারিও।' নির্লিপ্ত পিৎসার প্যাকেট অন্তরার হাতে দিয়ে বিলের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। অন্তরা ভিতরে এসে বসতে বলে কিচেনে গেল প্যাকেট রেখে আসার জন্য। পেমেন্ট নিয়ে এসে বলে 'আমার মিস্টার আসতে আসতে রাত ন'টা। তাই মা-মেয়ে দুপুরে পিৎসার খেয়ে চালিয়ে দিব। বিকালে রান্না করব। তোমার তাড়া না থাকলে আমাদের সাথে জয়েন করতে পার।' নির্লিপ্ত বুঝতে পারে না। এটা সামান্য নিমন্ত্রণ নাকি প্রশ্রয়। 'আমার তাড়া আছে' বলে চলে আসে নির্লিপ্ত। আসার আগে অন্তরার মেয়েটা এসে দাঁড়ায় মায়ের শাড়ি ধরে। মেয়েটার মুখের পানে তাকিয়ে কেন জানি নির্লিপ্তর নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়।
পথে আসতে আসতে নির্লিপ্ত সুনীলের একটা কবিতার কয়েকটি লাইন শুধু মনে মনে আবৃত্তি করে।
''বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এরকম আতরের গন্ধ হবে !
ভালবাসার জন্য আমি হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়েছি
দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীলপদ্ম
তবু কথা রাখেনি বরুণা,
এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ এখনো সে যে কোন নারী !''
(জীবিত বা বিবাহিত কোন চরিত্রের সাথে এই ফালতু গল্পের চরিত্রদের কোন সম্পর্ক নাই। কোন মিল খুঁজে পেলে তা নিতান্তই কাকতাল, আর পাঠকের কল্পনাপ্রবণ মনের পরিচয়মাত্র।)
সুনীলের এই কবিতাটার ব্যাপারে আমার একটা প্রশ্ন ছিল ''বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীল পদ্ম" - এখানে ১০৮টা নীল পদ্ম কেন? কেন ১০৯ বা ১০৭টা না?
উত্তরমুছুননেট ঘাটাঘাটি করে পেলামঃ
১০৮টা পদ্ম সরাসরি অকালবোধনের রেফারেন্স। দেবী দুর্গাকে ঐ সংখ্যক পদ্মই দিয়েছিলেন রামচন্দ্র, এবং শেষমেশ নিজের চোখ উপড়ে।
এ ব্যাপারে অশোক দা ভাল বলতে পারবেন।
nillipto hoye gela sesh porjonto?
উত্তরমুছুনontora niye amar sondeho ase tumi ki sotti bolla naki chapa marla bujhte china..
NEwTOn eita kon newton ta tomake xplain kora ucit chilo...obossi OF Newton na.
sunil babur nil-padmo er kanini holo nil-podmo ta khub e birol ful..onek khuje bissho veje 107 ta podmo pete sokkhom hoyese se..valobashar jonno r se ki korte pare..
এতদিন মহান সায়নের বাণী শুনছি । আজকে আমারটা (কপি মারা) শুনেন " যা করার আজকেই করো , ক্যায়া পাতা কাল হো না হো ;) " © শাহরুখ ভাই ।
উত্তরমুছুননীল কালিতে ডিসক্লেইমার দিয়ে দিয়েছি।
উত্তরমুছুন(জীবিত বা বিবাহিত কোন চরিত্রের সাথে এই ফালতু গল্পের চরিত্রদের কোন সম্পর্ক নাই। কোন মিল খুঁজে পেলে তা নিতান্তই কাকতাল, আর পাঠকের কল্পনাপ্রবণ মনের পরিচয়মাত্র।)
তারপরও যেহেতু আপনার কল্পনাপ্রবণ মন অতিকল্পনা করছে তো বলি এই নিউটন OF Newton বা Isaac Newton না। এই নিউটনের সাথে মনে হয় আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি।
আর এটা নিতান্তই একটা গল্প। এর সাথে বাস্তবের মিল খোঁজা উচিৎ না।
শেষ পর্যন্ত এই ছ্যাকাস্পেশালিষ্ট এর বাণী দিলা। ও তো আবার ছ্যাকা না খাইয়া ছবি হিট করতে পারে না।
উত্তরমুছুনকমেন্টস টেস্টিং উইথ পিকচার
উত্তরমুছুনআর আপনার ১০৮টা নীলপদ্ম থিউরী মনে হয় ঠিক না।
উত্তরমুছুনআর আপনার ১০৮টা নীলপদ্ম থিউরী মনে হয় ঠিক না।
উত্তরমুছুন