"দেখছ কাউসার ভাই কত দিক নিয়ে কাজ করে। কার্টুন আকা, উপন্যাস লিখা। উনার "বৃষ্টির ছায়া" উপন্যাসটা পড়লাম। এটা তো আমার পড়াই হত না যদি না তুমি আমাকে ফেসবুকে ইনভাইটেশন পাটাতে। উনি নাকি আবার কবিতাও লেখেন। কই আমাকে দেখে নিজের না হোক অন্য কোন কবির কবিতাও তো শুনাতে পার।" সকাল দেখা হতেই আক্ষেপের সুরে বলল।

আমি বললাম
" প্রহর শেষে আলোয় রাঙ্গা সেদিন চৈত্র মাস।তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।"এ কবিতাটাই বলতে চাই। কিন্তু পারিনা। সকালের মুখে কাউসার ভাইর নাম শুনে মেজাজটা চরম খারাপ হয়ে গেল। আজ সারাদিন শুধু কাউসার ভাইর উপন্যাস আর কবিতার প্রসংশা চলবে। প্রমিকারা প্রেমিকদের কাছে অন্য ছেলের প্রসংশা করে তাদের জেলাস করার জন্য। আমি এখন জেলাস না। কারণ ছোটবেলা থেকেই এই লেখক এবং খুবই ভাল বড়ভাইটাকে খুব হিংসে করতাম। যখন পড়াশুনা না করে অন্য দিকে মনযোগ দিতাম তখন আম্মু/আব্বু যার উদাহরণ প্রথমেই সামনে নিয়ে আসতেন সেটা হচ্ছে এই কাউসার ভাই। তাই আজ সকালের মুখে উনার প্রসংশা খুব একটা আবেদন নিয়ে আসে না আমার কাছে। কিন্তু মেজাজ খুব খিচরে আছে; আজ আর প্রেম হবে না হবে গ্রন্থালোচনাঃ উপন্যাস "বৃষ্টির ছায়া"।
"কই একেবারে নিরব হয়ে গেলে, কিছু বলছ না যে।"-সকাল আমাকে একটা আলতো ধাক্কা দেয়। আমি শৈশব থেকে বর্তমানে ফিরি। "বইটার নাম কি যেন বলছিলে?"- বইটার নাম জানা আমার কাছে জরুরি না; কিন্তু দেবীকে খুশি রাখা জরুরি।
বইটার নাম "বৃষ্টির ছায়া" লেখকের নাম মহিউদ্দিন কাউসার। ইতি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত। উনার লেখার সাথে আমার আগে পরিচয় হয়নি। প্রথমবার পড়েই উনার লেখা আমার ভাল লেগেছে। গল্পগুলো সুন্দর, ছিমছাম। চরিত্রগুলো উপস্তাপন করেছেন খুব সাবলীলভাবে।
আমি আলোচনায় অংশ না নিয়ে পারলাম না। " উনার লেখার সাথে আমার আগে থেকেই পরিচয় আছে। উনার দু'টা উপন্যাস আমি পড়েছি। "অপাপবিদ্ধ" ও "সূর্যদের অনেক স্বপ্ন"; আমার কাছে দু'টাই ভাল লেগেছে। তবে আমার ধারণা উনি কারও লেখা পড়ে তার মত করে লেখার চেষ্টা করেন। যেমন "অপাপবিদ্ধ" তে লেখার স্টাইল কিছুটা মুনীর চৌধুরীর মত। "সূর্যদের অনেক স্বপ্ন" তে সমরেশ মজুমদারের মত। আর "বৃষ্টির ছায়া" নিয়ে আমি বলতে পারব না' আমি পড়িনি।
"হুমায়ুন আহমেদের মত"- সকাল আমার কথা শেষ হবার আগেই বলে দিল এবং ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে বইটি বের করে আমাকে "নিজ দায়িত্বে ফেরত" শর্তে পড়তে দেয়। এই "শর্ত প্রযোজ্য" আমার চিরাচরিত স্বভাবের কারনেই। যাই হোক আমি ফেরত দেয়ার কথা ভাবছি না। ভাবছি কাউসার ভাই এতই ফেমাস হয়ে গেছেন যে আমার প্রেমিকা ভ্যানিটি ব্যাগে তার বই নিয়ে ঘুরে। সকাল বলেই যাচ্ছে- " উনি এই উপন্যাসে পুরুষে গন্ডগোল লাগিয়েছেন মনে হয়। প্রথমে দেখা যায় লেখক বর্ণনা করছেন। আবার পড়ে দেখা যায় চরিত্র নিজে বর্ণনা করছে।
আমি বললাম " উপন্যাসটা কাদের নিয়ে লেখা? মানে কাহিনী কি?
সকালের মনে হয় আগ্রহ আরেকটু বেরে গেল-"এটা আসলে আমাদের ঢাকা শহরের কিছু পরিচয়হীনদের পরিচয় অন্বেষণ এর গল্প। পড়ে মনে হবে ঢাকায় চলার পথে এদের অনেক দেখেছি। কিন্তু কথা বলা হয় নি কোনদিন।" আমার কাশির শব্দে সকাল তার কথা থামায়। ইদানিং সিগারেট বেশী খাওয়া হচ্ছে। কাশিটা খুব ভুগাচ্ছে। আমি বললাম-"ফিনিশিংটা কেমন হয়েছে?"
এত তারাতারি ফিনিশিং এ চলে যাওয়ায় সকাল একটু আশাহত। আরো কিছুক্ষণ বক বক করা ইচ্ছা ছিল মনে হয়। সকাল আশাহত গলায় বলল-" ফিনিশিংটা দারুণ হয়েছে। উনি পাঠকদের ডাবল টেষ্ট দিয়েছেন। প্রথমে মনে হয়েছে একটা হ্যাপি এন্ডিং হবে। কিন্তু লেখক মাত্র তিনটা প্যাড়ার মাধ্যমে উপন্যাসটাকে স্যাড এন্ডের দিকে নিয়ে গেলেন। তুমি যদি হ্যাপি এন্ড দেখতে চাও তবে তিন প্যাড়া আগে পরা থামিয়ে দিও।"
"উপন্যাসে কোন সুন্দর লাইন?"- এ বিষয়টা আমি আর সকাল শিখেছি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সায়ীদ স্যারের কাছ থেকে। কোন বই পড়লে সুন্দর লাইনগুলো ডাইরীতে লিখে রাখা।
সকাল তারাতারি আমার কাছ থেকে বই নিয়ে পড়ে শুনায় (মার্কার পেন দিয়ে হাইলাইট করা, পৃ-৩১ )
"যেখানে নিস্তরঙ্গ সংসারেই অভ্যস্ত হয়ে ওঠে জীবন, সেখানে কে-ই বা জলোচ্ছ্বাস চায়।"পড়ে শেষ করেই মুখটা করুণ করে সকাল বলে- "কিন্তু উনি বইটা তোমার অপছন্দের লোককে উৎসর্গ করেছেন। আচ্ছা তোমার এই অপছন্দের কারণটা কি?"
আমার এতক্ষণ সবই ভাল লাগতে শুরু করছিল। কিন্তু আর লাগবে না। একটা সিগারেট ধরিয়ে বললাম-" আমি তোমাকে রিসেন্ট একটা উদাহরন দেই গত ০৬/০৯/২০১০ তারিখে প্রথম আলো ঈদ উপহারে "একটি রম্য স্মৃতি" তে লিখেছেন-
"...বাঙালি মারলে জরিমানা হবে না, কিন্তু একটা সাদা মারলে খবর আছে!"
এরকম একটা কথা বলার মানে কি? এটা তো একটা বর্ণবাদী রেসিষ্টের কথা। উনি এটাতেই আরো লিখেছেন -
"...রবি ঢাকায় যে আমাদের এভারেস্ট জয়ের খবর এসএমএস করে পাঠিয়েছিল, তা কেউ বিশ্বাস করল না। কিন্তু একজন করলেন। তাঁর নাম মিতু। তিনি রবির স্ত্রী। রবি আমাদের জানালেন, ‘মিতু বিশ্বাস করছে আমরা এভারেস্ট জয় করছি। মিতু বিশ্বাস করছে।’ আমার চোখে জল। এই রকম স্ত্রীই তো দরকার, যে স্বামী যা বলবে তা-ই প্রশ্নহীন বিশ্বাস করবে। কেন আমাদের ঘরে ঘরে এই রকম স্ত্রী থাকে না?''
উনার মুসা এভারেষ্ট জয় করেছে কি করেনি তাই নিয়ে সন্দেহের জবাবে মেয়েদের ছোট করতে পারেন না। আর এটা নিয়ে প্রথম আলো অনলাইন ভার্সনে আমি মন্তব্য করেছিলাম যে নিজ জাতি এবং মেয়েদের সম্পর্কে এমন ধারণার পরও উনার উপসম্পাদক পদ টিকে আছে কিভাবে। কিন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী আমাদের চুতিয়া প্রথম আলো তা প্রকাশ করে নি।
আমি কাউসার ভাইর "বৃষ্টির ছায়া"-র উৎসর্গ পাতাটি দেখলাম। জোরে জোরে পড়লাম-
"আনিসুল হক (স্ক্রিপ্ট দেখেই): বাংলা সাহিত্যের কোন ক্ষতি করবা না তো?
আমি (ফিস ফিস করে): চেষ্টা করে দেখি পারি কিনা?
আনিসুল হক ( হাসতে হাসতে): অবশ্য পারবাও না, পারলে এতোদিনে আমিই করে ফেলতাম।
সুরসিক সুসাহিত্যিক আনিসুল হক ওরফে মিটুন দা কে।"
(আমি=মহিউদ্দিন কাউসার)
আমি বলি-"আনিসুল হক ক্ষতি কি বাকী রেখেছেন কিছু?" আর কাউসার ভাই লাষ্ট লাইনে আরও কিছু লাগাতে পাড়তেন। যেমন- "কবি-উপন্যাসিক-গদ্যকার্টুনিস্ট-কলামলেখক-প্রকৌশলী ও সদ্য আমেরিকা ফেরত।"
জন্মদিন উপলক্ষে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন কবে না দেখি শিশ্নের আগা কাটা দিনের বিজ্ঞাপন দিয়ে সবাইকে দাওয়াত দিচ্ছেন।
সকাল আমি যতদূর জানি বইমেলায় আনিসুল হক বইটির মোড়ক উন্মোচন করছেন। মনে হয় কাউসার ভাই এর জন্য উৎসর্গ উপঢৌকন দিয়েছেন।
বিঃ দ্রঃ এটা কোন গতানুগতিক গ্রন্থালোচনা না। আরিফ জেবতিক ভাই প্রথম এরকম উল্টাপাল্টা ফরমেট শুরু করেন। আমার এই উল্টাপাল্টা ফরমেট খুব পছন্দের।
পুনশ্চঃ একদিন বিকেলে চারুকলার বিপরীত দিকের খালি জায়গায় কাউসার ভাই আর আমি বসে আছি। একটা ছোট ছেলে চা-সিগারেট নিয়ে আসে। কাউসার ভাই আমাকে চা খাওয়ায়। চাওয়ালা ছোট ছেলেটা বলে "মামা সিগারেট লাগব।" কাউছার ভাই বলে না এবং আমাকে কাউছার ভাই বলে, 'তুমি সিগারেট খাও নাকি, খেলে নিতে পার।' আমি বলি 'খাই না।' মিত্যা বলি নি খাই তো না, পান করি। তাই এখানে উনার বইয়ের আলোচনার মধ্যে ধূমপান করলাম। হা হা হা...।
ছবি-১: ফেইসবুক গ্রুপ
ছবি-২: আলী-মাহমেদ ভাইয়ের ছবি ব্লগ
sokale porce, annorokom akta moja payce , shuvro
উত্তরমুছুননা। সকাল এটা পড়ার সম্ভবনা কম। না পড়লেই বরং ভাল।
উত্তরমুছুন@ Shuvro
লেখার ধরনটা খুবি ভাল লাগল...
উত্তরমুছুনধন্যবাদ সাজু ভাই।
উত্তরমুছুনsokale porce, annorokom akta moja payce , shuvro
উত্তরমুছুননা। সকাল এটা পড়ার সম্ভবনা কম। না পড়লেই বরং ভাল।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ সাজু ভাই।
উত্তরমুছুন"উপন্যাসে কোন সুন্দর লাইন?"- এ বিষয়টা আমি আর সকাল শিখেছি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সায়ীদ স্যারের কাছ থেকে। কোন বই পড়লে সুন্দর লাইনগুলো ডাইরীতে লিখে রাখা।"
উত্তরমুছুনএখন থেকে অভ্যাস হিসেবে রপ্ত করলাম । ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে ওই লাইনগুলো ।
এই অভ্যাসটা আমার ছোটবেলার। সবসময় এই কাজ করতাম। এমনো হত একটা বইয়ের জন্য একটা ডাইরী শেষ করে ফেলছি।
উত্তরমুছুন